ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দার ইন্তেকাল করেছেন। তার জানাযা নামায ঝিনাইদহ আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়।
এক নজরে তার সম্পর্কেঃ
১৯৭২ সালের পর ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৭৩ সালে ঝিনাইদহে একটি মিটিংয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মুজিববাদী ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়ে যায়। ওই মিটিংয়ে তৎকালীন ঝিনাইদহ মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক আহমেদ এবং তরুণ ছাত্রনেতা রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দারকে মহকুমা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব দেন। এরপর থেকেই রাজপথে লড়াই চলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের। ঝিনাইদহের অধিকাংশ ছাত্রনেতা তখন জাসদ ছাত্রলীগের পক্ষে অবস্থান নেন।
১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার শিকার হলে ২২ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যার পতিশোধ নিতে সুন্দরবন থেকে মুর্শিদাবাদ সেক্টরে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে ভারতে যান তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দার। এই সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মোস্তফা মহসিন মন্টু। ২৩ মাস ভারতে থাকার পরে কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হলে দেশে ফিরে এসে গ্রেফতার হন তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দার। এ সময় ঢাকার কলাকুপা বান্দরা বিশেষ কারাগার ও ময়মংসিংহের মহিলা ক্যাডেট কলেজ বিশেষ কারাগারে ২২ মাস বন্দি থাকেন।
১৯৭১ সালে তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দারের ৪ ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দার কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় বড় ভাই আমিনুল ইসলাম (মুলাম) জোয়ার্দ্দারকে শৈলকুপা উপজেলার ভাটই বাজারে নির্মমভাবে হত্যা করে জাসদের গণবাহিনীর সন্ত্রাসীরা। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর এক মাস পর কারাগার থেকে সংবাদ পান তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দার। তিনি তার দাফনেও অংশ নিতে পারেননি। কারামুক্ত হয়ে ১৯৭৯ সালে সাংগঠনিক জেলা হিসেবে প্রথম ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন গোলাম সরোয়ার খান সউদ।
তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় ঝিনাইদহ কেসি কলেজে ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ পূর্ণ প্যানেলে নির্বাচিত হয়। এর পরে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্রমৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ একত্রিত হয়ে ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ওই সংঘর্ষে তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দারের ঘনিষ্ঠ ছাত্রলীগকর্মী সেকেন্দার আলী নিহত হন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা সেকেন্দারের গ্রামের বাড়ি শৈলকুপা উপজেলার দুধসরে গিয়ে কবর জিয়ারত করেন এবং পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন। কেসি কলেজের সামনে থেকে তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দারের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের বিরোধী পক্ষ। ওই হামলায় ছুরিকাঘাতে ও হকস্টিকের নির্মম প্রহারে মারাত্মক জখম হন তিনি।
ছাত্রলীগ থেকে সরাসরি জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। এর পরের সম্মেলনে দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৯৭ সালের সম্মেলন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হলে কেন্দ্র থেকে তাকে একক সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি অ্রাড. আয়ুব হোসেন ও তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দার নেতৃত্ব দিয়ে জেলাব্যাপী আওয়ামী লীগের ব্যাপক সাংগঠনিক প্রসার ঘটান। ২০০৪ সালের সম্মেলনে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান।
২০১৫ সালে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১/১১ কিংবা বাকশালকালীনও আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে শক্ত অবস্থানে কাজ করেছেন। স্থানীয় নির্বাচনে জেলাব্যাপী দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণার কাজ করে গেছেন।