ডিসি-ইউএনওদের জন্য কেনা হচ্ছে ২৬১টি গাড়ি

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, 261 luxury cars are being purchased for DC and UNOs Bangladesh; District Commissioners DC and Upazila Nirbahi Officers UNO; Each car will cost 1 crore 46 lakh taka
261 luxury cars are being purchased for DCs and UNOs

জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য ২৬১টি স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি) কেনা হচ্ছে। যার প্রতিটির মূল্য প্রায় ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

দেশে চলমান আর্থিক সংকটের মধ্যেই জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য প্রায় ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় ২৬১টি নতুন জিপ গাড়ি কেনা হচ্ছে। অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এসব নতুন গাড়ি কেনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন মিলেছে।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আর্থিক সংকটে ব্যয় সংকোচন নীতির মধ্যে ডিসি ও ইউএনও কার্যালয়ের জন্য এসব গাড়ি কেনার প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন করে সরকারি বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নভেম্বরে প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেলে অর্থনৈতিক সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ডলার সংকটের কারণে তা স্থগিত করে ফেরত পাঠানো হয়।

বর্তমানেও আর্থিক সংকটে রয়েছে সরকার। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয় সংকোচনের নীতি ঘোষিত রয়েছে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বন্ধ রয়েছে সরকারি যানবাহন কেনা। এর মধ্যেই এসব গাড়ি কেনা হচ্ছে। জানা গেছে, ৮৮ কোটি টাকায় ডিসি কার্যালয়ের জন্য কেনা হচ্ছে ৬১টি মিতসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স জিপ। প্রতিটি জিপের দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। ইউএনও কার্যালয়ের জন্য কেনা হবে ২০০টি একই গাড়ি। এ ক্ষেত্রে প্রতিটির দাম একই ধরে মোট ব্যয় হবে ২৯১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ গাড়ি কেনার পক্ষে যুক্তি দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দফায় দফায় চিঠি চালাচালি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। তুলে ধরা হয় নতুন গাড়ির গুরুত্ব। গত ১৫ মে বেশ গোপনীয়তার সঙ্গে এজেন্ডাভুক্ত না করে টেবিলে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করা হয় প্রস্তাব। সেখানে অনুমোদন পাওয়ার পর মেলে প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদন।

গাড়ি কেনার সাফাই হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, মাঠ প্রশাসনে বেশির ভাগ গাড়ির আয়ুষ্কাল পার হয়েছে ১৩ বছর। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন নির্বাচন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ মাঠ পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন সেবার জন্য দরকার মানসম্মত নতুন গাড়ি। তাই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে এসব গাড়ি কেনা হবে। যেখানে গাড়ির দামের বাইরে ভ্যাট, ট্যাক্সের বড় অংশই পাবে সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।

এদিকে আর্থিক টানাপোড়েনের এই সময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি কেনার উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবসম্মত– তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রশাসনের জন্য এ ধরনের কেনাকাটা স্বাভাবিক সময়ে হলে প্রশ্ন উত্থাপিত হতো না। কিন্তু বর্তমানে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক থাকায় সরকার অর্থ ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন নীতির ঘোষণা দিয়েছে। ফলে এ সময়ে নতুন গাড়ি কেনায় প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। সরকার যা প্রচার করছে, তা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হচ্ছে কিনা– সেই প্রশ্ন উঠবে।’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রাহমান বলেন, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যয়ে কাটছাঁট হচ্ছে। যেগুলো প্রয়োজনীয় নয়, সেসব জিনিস কেনায় করা হচ্ছে নিরুৎসাহিত। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যয় করার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

Google search engine

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here