ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার ঘটনায় পরিকল্পনাকারী শাহীনের (আক্তারুজ্জামান শাহীন) বড় ভাই কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র শহীদুজ্জামান সেলিমকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন নিহতের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
শুক্রবার (২৪ মে) বিকেল ৫টার দিকে কালীগঞ্জ পৌরসভার মূল বাসস্ট্যান্ডে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানান তিনি। এমপি আনারকে নৃশংসভাবে হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও হত্যার পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করেন পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
মানববন্ধনে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, ‘আমি প্রশাসনের ভাইদেরকে বলতে চাই, আমার বাবাকে হত্যার পরিকল্পনাকারী মূলহোতা শাহীনের (আক্তারুজ্জামান শাহীন) বড় ভাই পাশের উপজেলার (কোটচাঁদপুর) পৌর মেয়র। তাকে কেন এখনো আটক করা হয়নি? তাকে গ্রেপ্তার করুন, তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসা করুন। কেন তার ভাই এতগুলো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত? কেন আমার বাবাকে হত্যা করা করে টুকরো টুকরো করা হয়েছে? কেন সে একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে তার ভাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসেনি? একজন জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া। কিন্তু তিনি (পৌর মেয়র) সেটি করেননি। যদি সে অপরাধীকে শাস্তি দিত তাহলে আজ আমার বাবাকে হারাতাম না। তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তার ভাইকে পাওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, আমি কালীগঞ্জ আসতে পারেনি। কষ্টে বুকটা ভেঙে গেছে। আমার বাবা যদি সত্যি অপরাধ করে থাকতো বা অপরাধী হয়ে থাকতো তাহলে সে ভারতে নেমে ভ্যানে করে ঘুরে বেড়াতো না, আমার বাবা হাসতে হাসতে, খেলতে খেলতে ইন্ডিয়ায় গেছে। আমরা সেই ভিডিও প্রকাশ করতাম না। সে অপরাধী হলে আমরা ভিডিও লুকিয়ে রাখতাম।
ডরিন আরও বলেন, যে সব সাংবাদিক ভাইয়েরা নিউজ করছেন, দয়া করে একটু কালীগঞ্জে আসেন। আমার বাবাকে তো মেরেই ফেলেছে, বাবাকে তো আর পাবো না। আপনারা কালীগঞ্জে আসেন, সাধারণ মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক ছিল। সে হাজার হাজার মানুষের জানাজা পড়িয়েছে। কিন্তু আজ সেই এমপির নিজের জানাজাই হচ্ছে না। এক টুকরো মাংস আমি পাইনি। আমি যখন শুনেছিলাম আমার বাবা নেই, তখন আমি ভেবেছিলাম আমার বাবাকে একটু ছুঁয়ে দেখবো। এতো কষ্ট আমি সহ্য করবো কী করে? এই দিনের কথা আমি কখনো ভুলবো না। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু একটা তাজা প্রাণ মেরে কীভাবে তারা টুকরো টুকরো করে, আপনারা কালীগঞ্জবাসী এর বিচার করবেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। ১৬ মে থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। বুধবার (২২ মে) পশ্চিমবঙ্গ থেকে খবর আসে যে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তার মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি ভারতের পুলিশ। তবে এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উঠে এসেছে কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র শহীদুজ্জামান সেলিমের ছোট ভাই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহীনের নাম।