স্কাইডাইভিংয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে ৪১ হাজার ফুট উঁচুতে উড়ে যাওয়া বিমান থেকে শূন্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে সফলভাবে পৃথিবীতে অবতরণ করলেন বাংলাদেশি যুবক আশিক চৌধুরী। এসময় বাংলাদেশের লাল–সবুজ পতাকা দুই হাতে মেলে ধরে আকাশে ভাসতে থাকেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে সম্পন্ন হয় দুঃসাহসিক এ অভিযান। অল্পদিনের মধ্যেই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে ঠাঁই পাবে বলে আশা আশিক চৌধুরীর।
৪১ হাজার ফুট উচু থেকে ঝাঁপিয়ে সফলভাবে পৃথিবীতে অবতরণ করেন বাংলাদেশি ডাইভার আশিক চৌধুরী।
উচ্চতাভীতি থাকা মানুষটি জীবনে হাজার ফুট উপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অনেক বার। অদম্য ইচ্ছেশক্তির বলে ভয়কে করেছেন জয়। নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন একজন সফল স্কাইডাইভার হিসেবে। তবে আজকের এ ডাইভিং অন্যদিনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। কেননা আশিক এবার লড়ছেন লাল সবুজের পতাকা হাতে, দেশের জন্য।
বিমান থেকে লাফিয়ে পড়ার দুঃসাহসিক এই অভিযানের নাম প্যারাশুটিং বা স্কাইডাইভিং। যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সাহায্যে বায়ুমণ্ডলের উচু স্থান থেকে স্থল বা সমুদ্রপৃষ্ঠের উদ্দেশ্যে ঝাপিয়ে পড়েন স্কাইডাইভার। গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সঙ্গে থাকে প্যারাশুট।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ২৫ মে সকাল পৌনে ৯টায় মেমফিসে ৪১ হাজার ফুট উঁচু থেকে ঝাঁপ দিয়ে লাল সবুজের পতাকা হাতে মাটিতে সফলভাবে নেমে আসেন আশিক চৌধুরী। মেঘের ভাজে ভাজে পাখির মতো উড়ে জানান দেন বাংলাদেশকে। জানান দেন বাংলার মানুষের অদম্য সাহস আর শক্তির।
পৃথিবীর বুকে নামতে থাকা আশিক এক পর্যায়ে খুলেন প্যারাসুট। এরপর ধীরে ধীরে নেমে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসের নির্ধারিত এয়ারফিল্ডে। সেখানে উপস্থিত একমাত্র স্বজন তার স্ত্রীর চোখে মুখে তখন আনন্দের ঝিলিক।
সফল এই স্কাইডাইভিং দেশবাসীকে উৎসর্গ করেছেন স্কাইডাইভার আশিক চৌধুরী। তার প্রত্যাশা ‘দ্য লারজেস্ট ফ্ল্যাগ ফ্লোন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার’ নামের এই অভিযান অল্পদিনের মধ্যেই ঠাঁই করে নিবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে।
উইসকনসিন স্কাইডাইভিং সেন্টারের তথ্যমতে, সাধারণত স্কাইডাইভাররা মাটির ৮ থেকে ১৩ হাজার ফুট উপর থেকেই লাফ দেন। ১৫ হাজার ফুট ওপরে গেলে বাড়তি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। ৩০ হাজার ফুটের ওপর থেকে সাধারণ সামরিক বাহিনীর স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা ছাড়া কেউ ডাউভ করেন না।
সংবাদমাধ্যমকে আশিক জানান, বর্তমানে বিশ্বরেকর্ডটি ২৫ হাজার ফুটের। তিনিসহ ৭১ জন ডাইভার এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ উচ্চতা থেকে ডাইভ করার সিদ্ধান্ত নেন। আর এজন্য সেনা এবং বিমান বাহিনীর সহায়তা নিতে হয় তাদের।
মাটি থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উপরে এসে পিঠের প্যারাসুট খুলে দেন আশি। নেমে আসেন সফলভাবে। অবতরণের পর আশিক চৌধুরী বলেন, এটা খুবই এক্সাইটিং ছিল। ভয় পাওয়ার মতো ছিল! তবে সবকিছু ঠিকঠাকমতো হয়েছে। নির্ধারিত জায়গা থেকে ২০০ মিটার দূরে অবতরণ করলেও বড় ধরনের কোনও ইনজুরিও হয়নি।
বৈমানিক পরিবারের সন্তান আশিক পেশায় ব্যাংকার হলেও রপ্ত করেছেন বিমান চালানো। পাশাপাশি স্বপ্ন দেখতেন পাখির মতো উড়ে বেড়ানোর। সেই স্বপ্ন থেকেই অনুশীলন শুরু করেন স্কাইডাইভিংএ। বর্তমানে তিনি একজন সনদধারী স্কাইডাইভার।