অনেক রেস্তোরাঁয় বিনা মূল্যে পাউরুটি দেওয়ার ‘আসল’ কারণ কী, জানেন?

Do you know the'real' reason many restaurants give out bread for free, jessie inchauspé, glucose revolution the life changing power of balancing your blood sugar, glucose goddess

সেদিন কোনো একটা রেস্তোরাঁয় একটা ভিডিওতে চোখ আটকে গেল। আগত অতিথিদের সেখানে ওয়েলকাম ড্রিঙ্কের পরিবর্তে দেওয়া হয় ‘ওয়েলকাম মিল’। সেটি আর কিছু নয়, পাউরুটি। ভ্রু কুঁচকে গেল। পাউরুটি কেন দেয়, খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে মিসরের লোকেরা খ্রিষ্টের জন্মের আট হাজার বছর আগেই (এখন থেকে প্রায় দশ হাজার বছর আগে) পাউরুটি বানানোর কৌশল জানত। তবে বিভিন্ন ধরনের পাউরুটি আর পাউরুটির বিভিন্ন রেসিপি উদ্ভাবনে এগিয়ে ছিল ইতালি। শুরুতে ইতালির রেস্তোরাঁগুলোয় অতিথিদের পাউরুটি দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। এটা ছিল সম্পূর্ণ ফ্রি! ইতালীয় সংস্কৃতিতে মনে করা হয়, উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য সামান্য মাখন মাখানো একটুকরা পাউরুটির চেয়ে ভালো কিছুই হয় না!

পাউরুটির দাম খুবই কম। ‘মূল খাবার’ আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পাউরুটি চিবানোর চেয়ে ভালো বিকল্প পাওয়া ভার। তা ছাড়া, যিনি খেতে এসেছেন, এই উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়ে তাঁর ভেতরও কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে ওই রেস্তোরাঁয় কিছু ভালো বা দামি খাবার খাওয়ার একটা ‘মানসিকতা’ তৈরি হয়। ইতালিতে এর চল শুরু হলেও দ্রুত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রেস্তোরাঁয় পাউরুটি দিয়ে অভ্যর্থনা জানানোর এই সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ে। আমেরিকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়ও শুরুতে অতিথিদের পাউরুটি খেতে দেওয়া হয়। এখন বিভিন্ন ভারতীয় রেস্তোরাঁয়ও দেখা যাচ্ছে এই চর্চা।

রেস্তোরাঁয় শুরুতেই একটুকরা পাউরুটি দিয়ে আপ্যায়িত করার ‘আসল’ রহস্য সম্প্রতি একটা ভিডিওতে ফাঁস করেছেন জেসি ইনচাউসপে। ৩২ বছর বয়সী এই ফরাসি বায়োকেমিস্টকে ডাকা হয় ‘গ্লুকোজ গডেস’। জেসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার। তিনি লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক ও যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর করেন।

২০২২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বই ‘গ্লুকোজ রেভল্যুউশন: দ্য লাইফ চেঞ্জিং পাওয়ার অব ব্যালান্সিং ইয়োর ব্লাড সুগার’। বইটি নিউইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বইটি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওই বছর সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইয়ের রেকর্ড করে। এটি ৪০টির বেশি ভাষায় অনূদিত হয়। ২০২৩ সালের মে মাসে মুক্তি পায় তাঁর ‘দ্য গ্লুকোজ গডেস মেথড’। সেটিও নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলারের তালিকায় স্থান করে নেয়।

jessie inchauspé, glucose revolution the life changing power of balancing your blood sugar, glucose goddess
jessie inchauspé, book: glucose revolution, the life changing power of balancing your blood sugar.

ইনস্টাগ্রামে জেসির অনুসারীসংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৪৩ লাখ। জে শেঠির পডকাস্টে জেসি জানান রেস্তোরাঁয় শুরুতে একটুকরা পাউরুটি দেওয়ার ‘আসল’ কারণ। তাঁর বক্তব্য:

মনে করুন, আপনি একটা রেস্তোরাঁয় গেছেন। আপনাকে খানিকটা মজাদার পাউরুটি চিবাতে দেওয়া হলো। যতক্ষণ মূল খাবার আসছে, ততক্ষণে পাউরুটির স্টার্চ গ্লুকোজে পরিণত হচ্ছে। ফলে আপনার ‘সুগার স্পাইক’ (হুট করে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়া) হবে। আর এর আধঘণ্টা পরই আপনার ‘গ্লুকোজ ড্রপ’ করবে। ফলে গ্লুকোজশূন্যতায় প্রচণ্ড চিনির তেষ্টা পাবে। মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা জাগবে। আর সে সময় ওয়েটার এসে জিজ্ঞেস করবে, ‘স্যার/ম্যাম, আপনাকে কি কোনো ডেজার্ট দেব?’

এরপরই জে বলেন, ‘এখন সবকিছু আমার কাছে পানির মতো পরিষ্কার। এটা আসলে মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি আসক্তি তৈরি করে। খুব অল্প দামের পাউরুটি দিয়ে ডেজার্ট খাওয়ানোর কৌশল।’

জেসি আরও যোগ করেন, ‘তা ছাড়া, আপনি শেষে যে খাবার খান, সেটিই মূলত আপনার সামগ্রিক খাবারের অভিজ্ঞতা ভালো নাকি খারাপ, সেটা অনেকখানি নির্ধারণ করে। তাই আপনি যদি মিষ্টিজাতীয় খাবার দিয়ে শেষ করেন, সেটা একটা দারুণ অনুভূতি। আবারও ওই রেস্তোরাঁয় ফিরে আসতে চাইবেন আপনি।’

Google search engine

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here